আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় রাঙ্গামাটি জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত, রাঙ্গামাটি জেলা বাংলাদেশের ৮টি বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগের অন্তর্গত । রাঙামাটি বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার প্রশাসনিক সদর দফতর। এটি পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজধানী শহরও। শহরটি ২২°৩৮’ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯২°১২’ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত এবং এর উচ্চতা ১৪ মিটার (৪৬ ফু)। জেলা প্রশাসন জেলা রাঙ্গামাটির তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। চট্টগ্রাম থেকে ৭৭ কিলোমিটার (৪৮ মা) দূরে রাঙ্গামাটি। কাপ্তাই হ্রদের পশ্চিম তীরে এই জনপদটি অবস্থিত। রাঙ্গামাটি একটি পর্যটন গন্তব্য কারণ এটির প্রাকৃতিক দৃশ্য, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, হ্রদ,উদ্ভিদ এবং প্রাণীজগৎ, দেশীয় যাদুঘর, ঝুলন্ত সেতু ইত্যাদি রয়েছে।

Table of Contents
রাঙ্গামাটি জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত:
রাঙ্গামাটি জেলা মূলত এটির দর্শনীয় স্থান এর জন্য বিখ্যাত, নিম্নে রাঙ্গামাটি জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহ দেয়া হলোঃ
আসামবস্তি সেতু:
রাঙ্গামাটি সদর উপজেলাধীন আসামবস্তী এলকায় কাপ্তাই হ্রদের উপর নির্মিত আসামবস্তী হতে ব্রাম্মণপাড়া সেতুটি শূল শহরের সাথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করেছে প্রায় এক হাজার পরিবারের।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড এর প্রকৌশল শাখা মূলত ২০১৩ সালে এই সেতু নির্মাণের কাজ শূরু করে এবং ২০১৮ সালেই নির্মাণ সমাপ্তির সময় সীমা নির্ধারণ করলেও নির্ধারিত সময়ের প্রায় ২ বছর আগেই নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হয় এই সেতুর। ২১০ মিটার দৈর্ঘ এবং ৬ মিটার প্রস্থের এই সেতু নির্মাণে ব্যয় ৯ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা।

সেতুটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ার কারনে ব্রাহ্মণপাড়া, নোয়াপাড়া সহ আরো কয়েকটি পাড়ার প্রায় প্রায় ১ হাজার পরিবারের যাতায়াত সুবিধা নিশ্চিত হয়েছে। এই সেতু নির্মাণের আগে এই সব এলাকার লোকজনকে নৌকা করে কাপ্তাই হ্রদ পাড়ি দিয়ে পৌছাতে হতো আসামবস্তী তথা মূল রাঙ্গামাটি শহরে ।
প্রাকৃতিক দূর্যোগ কিংবা ঝড় বৃষ্টির সময় এলাকার লোকজনদের হ্রদ পাড়ি দিয়ে রাঙ্গামাটি শহরে আসা ছিল অসম্ভব । এদিকে সব এলাকার স্কুল ও কলেজগামী শিক্ষার্থীদের ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পৌছাতে হতো অনেক কষ্ট করে। এখন এই সেতু তাদের সকল দুঃখ কষ্টের অবসান ঘটাতে সক্ষম হয়েছে।
ফুরমোন পাহাড়:
ফুরমোন পাহাড় (Furomown Hill) রাঙ্গামাটিতে অবস্থিত একটি পাহাড় যার উচ্চতা এক হাজার ৫১৮ ফুট। রাঙ্গামাটি শহরে ঢুকার সময় এটি চোখে পড়বে যা শহর থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এ পাহাড়ের চূড়ায় উঠে রাঙামাটি শহরের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।

নির্জন পরিবেশ আর কাপ্তাই হ্রদের বিশাল জলরাশির দেখা মেলে পাহাড় থেকে। এখানকার প্রকৃতির সৌন্দর্য আপনাকে বিমোহিত করবে। ফুরোমনের চূড়া থেকে পাখির চোখে দেখা যায় লেকের বিস্তৃত জলরাশি। নীল জলরাশির কাপ্তাই লেক, স্বচ্ছ নীলাভ জল আর বিস্তৃত আকাশ দেখে মনে হতে পারে পাহাড়ের মধ্যে সমুদ্রের তীরে পৌঁছে গেছেন। শীতল বাতাস ছুঁয়ে থাকে লেকের নীল জল, পাহাড় পেরিয়ে কাছে-দূরে কেবল নীল জলরাশি। পুরো সৌন্দর্যই এক লহমায় দেখে নিতে পারবেন। পাহাড়ের দক্ষিণ-পশ্চিমে চট্টগ্রাম শহর, বন্দরে ভাসমান জাহাজের মাস্তুল। তার সঙ্গে দেখে নিতে পারবেন সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত। নৈসর্গিক সৌন্দর্যের সবটুকুই দেখা যাবে পাহাড়ের চূড়ায়।
কলাবাগান প্রাকৃতিক ঝর্ণা:
রাঙামাটি কলা বাগান ঝর্ণা। এটি জেলার কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়ন অবস্থিত। এ ইউনিয়নের আশ-পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য পাহাড়ি ছড়া। এ পাহাড়ি ছড়ার একমাত্র উৎপত্তিস্থল ঘাগড়া ঝর্ণাটি। যা সবার কাছে আপাতত ‘কলাবাগান’ ঝর্ণা নামে পরিচিত।
এখানে শুধু দেশি-বিদেশেী পর্যটক নয়, রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানসহ আশপাশের জেলার স্থানীয়দের উপস্থিতি থাকে চোখে পড়ারমত। কলা বাগান ঝর্ণা স্থল এখন যেন আনন্দ উৎসবের ফোয়ারা। ব্যাপক জনপ্রিয়তা থাকলেও এ ঝর্ণাকে ঘিরে এখনো গড়ে উঠেনি কোন পর্যটন কেন্দ্র। পর্যটকরা বলছেন, এ ঝর্ণাটি রক্ষণাবেক্ষণা করা গেলে, এটিকে ঘিরে গড়ে উঠতে পারে রাঙামাটির সম্ভাবনাময় অণ্যতম পর্যটন কেন্দ্র।
জানা গেছে, রাঙামাটি শহরে থেকে প্রায় ২০কিলোমিটার দূরে হলেও গাড়ি থেকে নেমে ছড়ার পথে হাটতে হয় আরও চার কিলোমিটার। কিছুটা সামনে এগুলেই দেখা মিলে ঝর্ণার স্বচ্ছ জল। অসংখ্য ছোট-বড় পথরের গা ঘেষে সাঁই সাঁই করে ধেয়ে চলেছে স্রোতধারা। এ ঝর্ণার শীতলতায় প্রাণচঞ্চল হয়ে উঠে পর্যটকরা। দুর হয়ে যায় সমস্ত ক্লান্তি।
দু’পাহাড়ের পথ ধরে হাটলে দেখা মিলবে এলোমেলো সারিতে সাজানো উঁচু-নিচু ছোট বড় অসংখ্য পাহাড়। আর এ পাহাড়ের বুক চিরে আছড়ে পড়ছে প্রবহমান সুরূল জলধারা। ঝর্ণা-পাহাড়ের সখ্যতায় হৃদয় নিংড়ানো সৌন্দর্য মিলবে এখানে। এ ঝর্ণার কলকল নিক্কন ধ্বনির উচ্ছাস ছড়িয়েছে চারপাশে।
যেন সবুজ অরণ্যের প্রাণের পরশ এঁকেছে কেউ। ঝর্ণার পানিতে গা ভিজিয়ে আনন্দে হারিয়ে যাচ্ছে ভ্রমণ পিপাসু নারী-পুরুষ। প্রায় প্রতিদিন অসংখ্য মানুষের পদাভারে মুখরিত হয়ে থাকে ঝর্ণা স্পট।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, র্দীঘ বছর ধরে রাঙামাটির সুবলং ঝর্ণার পরিচিতি থাকলেও, নতুন করে পর্যটকদের আকর্ষণ কেড়েছে ঘাগড়া ঝর্ণা। বহু আগেই স্থানীয়দের কাছে এ ঘাগড়া কলা বাগান ঝর্ণার পরিচিতির বিস্তৃতি ঘটলেও নিরাপত্তার অভাবে এখানে যেতে পার তো না কেউ। কিন্তু প্রকৃতির টানে সমস্ত বাধা বিপত্তি পিছু ঠেলে ঝর্ণা স্পটে ভিড় জমাছে স্থানীয়সহ দেশি-বিদেশী পর্যটকরা।
এ ব্যাপারে কথা হয় বন্ধুদের সাথে কলা বাগান ঝর্ণা ঘুরে আসা স্থানীয় পর্যটক সৈকত আহমেদ ও আরিয়ান মাহামুদ ইম্মির সাথে। তিনি বলেছেন, কলা বাগান ঝর্ণাটির চারদিক ঘিরে রেখেছে সবুজ পাহাড়। তাকালেই দু’চোখ জুড়ে দৃষ্টি কাড়ে। জুড়িয়ে যায় হৃদয়-মন। যা না দেখলে কল্পনাতে আল্পনায় আঁকা যাবে না ছবি। যা সত্যি আকর্ষণীয়।
তবে পাহাড়ি ছড়া দিয়ে ঝর্ণা স্থলে পৌছাতে হলে কিছুটা সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। পানির স্রোতে পা পিছলে পড়ারও সম্ভবনা রয়েছে। এছাড়া অন্যকোন সমস্যা নেই এখানে। তবে এ ঝর্ণা স্পটের আশপাশে প্রশাসনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেলে, পর্যটকদের উপস্থিতি আরও বাড়তো এখানে।
অন্যদিকে, ঘাগড়া কলাবাগান ঝর্ণাটি নিয়ে ব্যাপক পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান রাঙামাটির স্থানীয় প্রশাসনও।
এ ব্যাপারে রাঙামাটি পর্যটন কমপ্লেক্সের ও মোটেলের ব্যবস্থাপক সৃজন বিকাশ বড়ূয়া বলেছেন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অপূর্ব নৈসর্গিক সৃষ্টি রাঙামাটি। এ অঞ্চলের একমাত্র আকর্ষণ হ্রদ-পাহাড় আর ঝর্ণা বৈচিত্রতা। যার টানে এখানে প্রায় প্রতিদিন আসছে দূর-দুরান্তের হাজারো পর্যটক।
কিন্তু পর্যটকদের জন্য তেমন সুযোগ সুবিধা এখানে গড়ে উঠেনি। যার কারণে এ জেলা থেকে পর্যকদের আকর্ষণ কমে যাচ্ছে। রাঙামাটিতে পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়াতে এখানে ব্যাপক পরিকল্পনা প্রয়োজন। পর্যটন কেন্দ্রগুলো ঢেলে সাজানো গেলে, এ জেলা প্রতিনিয়ত মুখরিত থাকবে দেশি বিদেশী পর্যটকদের আনাগোনায়।
অভিযোগ রয়েছে, রাঙামাটির ঝর্ণাগুলো ব্যাপক পরিচিতি লাভ করলেও সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে অনেক ঝর্ণা।
উপজাতীয় জাদুঘর:
রাঙ্গামাটি শহরের ভেদভেদি নামক স্থানে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইন্সটিটিউটের অভ্যন্তরে এ জাদুঘরটি অবস্থিত। এখানে পার্বত্য অঞ্চলে ববাসরত উপজাতি সমূহের ঐতিহ্য এবং কৃষ্টি-সংস্কৃতির বিভিন্ন নিদর্শন দেখা যাবে। জাদুঘরে রক্ষিত উপজাতীয়দের বিভিন্ন যে কাউকে মুগ্ধ করে সহজে। এছাড়াও জাদুঘরের অভ্যন্তরে রয়েছে পার্বত্য অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সমূহের কৃষ্টি ও সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র। এর ভবনটি অনন্য আধুনিক স্থাপত্য কলায় নির্মিত।

ওয়াজ্ঞা চা এস্টেট:
চট্টগ্রামের বৃহত্তম ও মনোমুগ্ধকর চা বাগান হলো ওযাগ্গা চা এস্টেট। পাহাড়ী এলাকায় কর্ণফুলি নদীর তীরে এ চা বাগান অবস্থিত। কাদেরী টি এস্টেট পরিচালিত এই চা বাগান পর্যটকদের জন্য অত্যন্ত মনোরম ও উপভোগ্য। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটকদের মন জড়িয়ে দেয়।
থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাঃ-কাপ্তাই-এ থাকা ও খাওয়ার জন্যৌ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের রেস্টহাউস ও বেসরকারী পর্যায়ে কিচু আবাসিক হোটেল রয়েছে। এছাড়া রাঙ্গামাটি অবস্থান করেও কাপ্তাইয়ের বিভিন্ন দর্শণীয় স্থান দর্শন করা যায়।

যাতায়াত ব্যবস্থাঃ-রাঙ্গামাটি থেকে জল ও স্থল উভয় পথেই কাপ্তাই যাওয়া যায় (সময় লাগে ১ থেকে ২ ঘন্টা) বাস/মাইক্রো/অটোরিক্মা/ইঞ্জিনচালিত বোটযোগে যাওয়া যায়। চট্টগ্রাম বহদ্দারহাট হতেও বাসযোগে কাপ্তাই যাওয়া যায়। কাপ্তাই উপজেলার বড়ইছড়ি নামক স্থানে নামতে হবে। এখানে নেমে ওয়াগ্গাছড়া চা এস্টেট এর নৌকাযোগে কর্ণফুলি নদী পার হয়ে ওয়োগ্গাছড়া চা বাগান যেতে হবে।
কর্ণফুলি কাগজ কল:
কর্ণফুলী পেপার মিল- কেপিএম (ইংরেজি: Karnaphuli Paper Mills) হল চট্টগ্রামের চন্দ্রঘোনায় কর্ণফুলী নদীর তীরে অবস্থিত একটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কাগজের মণ্ড ও কাগজ উৎপাদনকারী শিল্প প্রতিষ্ঠান। এটি বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ কাগজ উৎপাদনকারী কোম্পানি। কোম্পানিটি শিল্প মন্ত্রণালয়ের স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বাংলাদেশ রাসায়নিক শিল্প কর্পোরেশন কর্তৃক পরিচালিত হয়।

১৯৫৩ সালে তদানীন্তন পাকিস্তান শিল্প উন্নয়ন সংস্থা কর্তৃক রাঙামাটি জেলা কাপ্তাই উপজেলার চন্দ্রঘোনায় কর্ণফুলী পেপার মিল প্রতিষ্ঠিত হয়। কর্ণফুলি পেপার মিলটি শিল্প আইনের অধীনে নিবন্ধিত প্রথম কাগজশিল্প যা ত্রিশ হাজার শ্রমিক নিয়ে এশিয়ার সর্ববৃহৎ কাগজ-কল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। মিলটি আমেরিকা, ইংল্যান্ড, জার্মানি, সুইডেন এবং ইতালির সহযোগিতায় ও বিশ্বব্যাংকের ঋণ সহায়তায় স্থাপিত হয়। প্রতিষ্ঠাকালীন লক্ষ্যমাত্রা ছিল বার্ষিক ৩০,০০০ মেঃ টন কাগজ উৎপাদন। ১৯৫৩ সালের ১৬ই অক্টোবর প্রতিষ্ঠানটি বাণিজ্যিক উৎপাদনে যায়। শুরুতে ব্যবস্থাপনা ত্রুটি থাকায় ১৯৬৪ সালে পাকিস্তান সরকার দাউদ গ্রুপের নিকট কোম্পানিটি বিক্রি করে দেয়। যারা এটির আধুনিকায়নের কাজ করে।[৩] ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হলে বাংলাদেশ শিল্প উন্নয়ন সংস্থা এটি অধিগ্রহণ করে।
কর্ণফুলী পেপার মিলের ক্রয়কৃত জমির পরিমাণ প্রায় ৩২.৪৭ একর, লিজপ্রাপ্ত জমি পরিমাণ ১১৯২.৯৬ একর এবং এটির মিল এলাকা ৪৪২.৩২ একর। এটির অন্যতম প্রধাণ কাঁচামাল হল বাঁশ। আর প্রাপ্তি নিশ্চিত করার জন্য বাঁশের জন্য রাইংক্ষং এলাকায় লিজপ্রাপ্ত জমির পরিমাণ প্রায় ৮৩,৪০৮ একর এবং কাচালং এলাকায় লিজপ্রাপ্ত জমির পরিমাণ প্রায় ৪২,৮৬৯ একর।
কংলাক পাহাড়:
কংলাক পাহাড় বাংলাদেশের রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার অন্তর্গত সাজেক ইউনিয়নে অবস্থিত। এটি সাজেক ভ্যালির সর্বোচ্চ চূড়া। সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে এর উচ্চতা প্রায় ১৮০০ ফুট।
কংলাক পাহাড়ের উপরে কংলাক পাড়া অবস্থিত। সাজেক ভ্যালি মূলত রুইলুই পাড়া এবং কংলাক পাড়ার সমন্বয়ে গঠিত। কংলাক পাহাড় থেকে লুসাই পাহাড় স্পষ্ট দেখা যায়। চারদিকে পাহাড়, সবুজ আর মেঘের অকৃত্রিম মিতালী চোখে পড়ে। সাজেক ভ্রমণরত পর্যটকদের কাছে এটি এখন আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। রুইলুই পাড়া হতে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরত্বে এটি অবস্থিত; সাজেকের হ্যালিপ্যাড হতে ৩০-৪০ মিনিট ট্রেকিং করে কংলাক পাড়ায় যেতে হয়।

কংলাক পাড়াটি কমলাক পাড়া নামেও পরিচিত। স্থানীয় তথ্য মতে, এই পাড়াটির পাশে বড় বড় কমলা বাগান অবস্থিত বলে এটিকে কমলাক পাড়া বলা হয়। পাহাড়ের নিচে কংলাক ঝর্ণা অবস্থিত এবং এই ঝর্নার নামানুসারেই এই পাহাড়ের নামকরণ করা হয়েছে।
পাহাড়চূড়ার ছোট্ট গ্রামটিতে ত্রিপুরা ও লুসাই নৃ-গোষ্ঠীর বসবাস৷ জুম চাষ এ পাড়ার প্রধান খাদ্য ও উপার্জনের উৎস। বেশি চাষ হয় হলুদ, আদা ও কমলার। কংলাকে পানি সংকট রয়েছে। প্রতিটি বাড়িতেই চোখে পড়বে একাধিক ও বড়বড় পানির রিজার্ভার। বৃষ্টির জমানো পানিই এ পাড়ার পানির মূল উৎস। অধিবাসীরা ঘরের চালা থেকে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করে রিজার্ভারে ধরে রাখেন ও দৈনন্দিন কার্যাদি সম্পন্ন করেন।
পথ কিছুটা ঢালু এবং বর্ষার সময় পিচ্ছিল থাকায় বয়স্ক ও শিশুদের উপরে উঠতে নিরুৎসাহী করা হয়। এলাকায় পানি কিছুটা অপ্রতুল বলে পর্যটকদের সাথে করে পানি নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়।
কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান:
কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান বাংলাদেশের রাঙ্গামাটি জেলায় অবস্থিত একটি অন্যতম জাতীয় উদ্যান। উদ্যানটি ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ বন ও পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক ৫,৪৬৪ হেক্টর বা ১৩,৫০০ একর জায়গা জুড়ে প্রতিষ্ঠিত হয়।
এই উদ্যানে ১৮৭৩, ১৮৭৮ এবং ১৮৭৯ খ্রিষ্টাব্দে বৃক্ষায়ন করা হয়েছিল, আর তারই ফলশ্রুতিতে এখানে গড়ে উঠেছিল একটি ক্রান্তীয় অতিবৃষ্টি অরণ্য। এই উদ্যানের প্রাণীবৈচিত্র্যের মধ্যে রয়েছে সম্বর হরিণ, মায়া হরিণ, হাতি, বনবিড়াল, মেঘলা চিতা, চশমাপরা হনুমান, মুখপোড়া হনুমান, উল্লুক প্রভৃতি। উদ্যানে রয়েছে দুটো রেস্টহাউজ। উদ্ভিদের মধ্যে আছে বাংলাদেশের প্রায় অর্ধেক বন্যপ্রাণী এই উদ্যানে থাকে। বিপন্ন প্রজাতির বেশ কিছু পাখির সন্ধান এখানে পাওয়া যায়।

এখানে রয়েছে ৬২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৭৪ প্রজাতির সরীসৃপ, ৩৮ প্রজাতির উভচর প্রাণী এবং ৩৫৮ প্রজাতির পাখি ও ২২১ প্রজাতির প্রজাপতি রয়েছে। উদ্ভিদের মধ্যে আছে সেগুন, জারুল, গামারি ও কড়ই গাছ, চাপালিশ, চম্পা, সোনালু, চালতা, চিকরাশি, শাল, শিলকড়ই, ধারমারা, গামারি, অর্জুন, আমলকি, আমড়া, বহেরা, বাজনা, বড়ই, পিটরাজ, পিটাল, বাঁশপাতা, বৈলাম, নাগেশ্বর, হিজল, উদল, উরিয়া, লোহাকাঠ ইত্যাদি।
২০১৬ এর আগস্ট পর্যন্ত এখানে ১৭ প্রজাতির বিপন্ন প্রাণি ছিল। বিপন্ন প্রজাতির মধ্যে আছে মেঘলা চিতা, উল্লুক, আসামি বানর, কাঠময়ূর, ধূসর কাঠঠোকরা, ক্ষুদে মাছরাঙ্গা, বিরল সাপ ও কচ্ছপ এবং বিরল প্রজাতির ব্যাঙ। নতুন প্রজাতির মধ্যে আছে এছাড়া এ উদ্যানে নতুন প্রজাতির পাখি ‘বড় নীল চটকের ।
অতিরিক্ত কাঠ সংগ্রহ, বনে আগুন এবং পর্যটনের অনিয়ন্ত্রিত বিকাশ এই বনের প্রধান হুমকি।
এই উদ্যানে প্রবেশ করতে টিকেট ক্রয় করতে হয়।
কাপ্তাই বাঁধ ও কর্ণফুলি পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্র:
কাপ্তাই বাঁধ বাংলাদেশের রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলায় অবস্থিত ও চট্টগ্রাম থেকে ৬৫ কিলোমিটার (৪০ মাইল) উজানে কর্ণফুলি নদীর উপর নির্মিত একটি বাঁধ। কাপ্তাই হ্রদ নামে পরিচিত এটির একটি কৃত্রিম জলাধার রয়েছে যার পানি ধারণক্ষমতা ৫২,৫১,০০০ একর (২১,২৫,০০০ হেক্টর)। বাঁধ ও হ্রদটি নির্মাণের প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করা। ১৯৬২ খ্রীস্টাব্দে এটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়। বাঁধের সঞ্চিত পানি ব্যবহার করে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। ১৯৬২ ও ১৯৮৮ সালের মধ্যে এখানে সর্বমোট ২৩০ মেগাওয়াট (৩,১০,০০০ অশ্বশক্তি) বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতাসম্পন্ন জেনারেটর বসানো হয়। এটি বাংলাদেশের বৃহত্তম বাঁধ ও একমাত্র জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র।
এছাড়া এখানে ‘কাপ্তাই ৭.৪ মেগাওয়াট সোলার পিডি গ্রিড কানেকটেড বিদ্যুৎকেন্দ্র’ নামে দেশের প্রথম সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হয়। পানিবিদ্যুৎকেন্দ্রের ভেতরে বাঁধের পাশে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের এই সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্রের অবস্থান।

- কাপ্তাই সেনানিবাস
- কাপ্তাই হ্রদ
- চিৎমরম বৌদ্ধ বিহার
- চিং হ্লা মং চৌধুরী মারি স্টেডিয়াম
- ঝুলন্ত সেতু
- ডলুছড়ি জেতবন বিহার
- তবলছড়ি আনন্দ বিহার
- দুমলং
- ধুপপানি ঝর্ণা
- নৌ বাহিনীর পিকনিক স্পট
- পাবলাখালী বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্য
- পেদা টিং টিং
- বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্সনায়েক মুন্সী আব্দুর রউফ স্মৃতি ভাস্কর্য

- বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র
- মুপ্পোছড়া ঝর্ণা
- যমচুগ বন বিহার
- রাঙ্গামাটি সেনানিবাস
- রাজবন বিহার
- রাজা জং বসাক খানের দীঘি ও মসজিদ
- রাজা হরিশ চন্দ্র রায়ের আবাসস্থলের ধ্বংসাবশেষ
- লাভ পয়েন্ট
- শহীদ শুক্কুর স্টেডিয়াম
- শুভলং ঝর্ণা
- সাজেক ভ্যালি
- হাজাছড়া ঝর্ণা
- চাকমা রাজবাড়ি (রাঙ্গামাটি)
আরও পড়ূনঃ

২ thoughts on “রাঙ্গামাটি জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত”